অপরাজিতা

ভালোবাসা / ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

Salma Siddika
মোট ভোট ১৮ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৯৬
  • ২৯
  • ১৯
"চয়ন , চয়ন, ওঠনা বাবা, তাড়াতাড়ি কর..."
কোনো শুক্রবার চয়ন সকালে আরাম করে ঘুমাতে পারে না। খালা অব্যশই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠাবে।
"কয়টা বাজে খালা?"
"আরে ব্যাটা, আটটা বাজে, এক্ষণ ওঠ , বাজারে যেতে হবে, তোর খালু দাওয়াত দ্দিয়ে বসে আছে, মেহমান রাতে আমাদের সাথে খাবে, কি মুশকিল দেখ, ঘরে বাজার নেই, তোর খালুর আক্কেল থাকলে আমাকে আগে বলত ।"
খালা কথা বলেই যাচ্ছে, চয়ন উঠে পড়ল। বাজারের দায়িত্ব তার। যেদিন ক্লাস থাকে আর বাজার করার দরকার হয়, খালু বাজারে যান। এই ব্যাপারটা তিনি একেবারেই পছন্দ করেন না। গজ গজ করতে থাকেন "বিদ্যান হবেন একেকজন, আর গাধার খাটনি খাটি আমি" -খালুর কমন ডায়লগ। তারপর বিকালে ক্লাস থেকে ফিরলে খালু আবার একগাদা কথা শোনাবেন , যেন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করা চরম অন্যায় কাজ।
চয়ন এসব গায়ে মাখে না, মাখলে চলবেও না। কচ্ছপের মত মাটি কামড়ে পরে থাকতে হবে। কান মুখ চোখ সব বন্ধ রাখতে হবে। মাথা থাকবে বরফ ঠান্ডা।মনে মনে ভাবতে হবে "আর মাত্র কিছু দিন।"
চয়ন ঝটপট তৈরী হয়। বাজার করা ভালই শিখে গেছে। বাজারের লিস্ট দেখে আগেই ঠিক করে কোথা থেকে কি কিনবে । হাতিরপুল বাজারে হাবিব নাম একটা ছেলে সকাল বেলা ফ্রেশ মাছ নিয়ে বসে, তার কাছ থেকে মাছ নিতে হবে।
বসার ঘরে খালু পত্রিকা পড়ছেন, তার সামনে পড়া যাবে না। বারান্দা হয়ে বের হতে হবে।
"এই যে চয়ন , কোথায় যাচ্ছ?বাজারে নাকি?"
"জি খালু"
"বাজার করা তো জানো না, বই পুস্তক পরা ছাড়া আর কিছু বোঝো ? গত সপ্তাহে মাছ এনেছ, পচা, মুখে দেয়া যায় না। "
চয়ন মনে মনে ভাবে গত সপ্তাহে মাছ খালু কিনে এনেছেন। কিন্তু মুখে এটা বলা যাবে না, তাহলে গরম তেলে পানি ফেলা হবে। খালু এখন লেকচার মোডে আছেন।তাকে লেকচার মোড থেকে লাউড স্পিকার মোডে নেয়া যাবে না। আনন্দ নিয়ে লেকচার দিবেন আর সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনে জি জি করে বের হয়ে আসতে হবে।
চয়ন খালুর কাছে মুক্তি পেয়ে নিচে গেটে এসে দেখে জয়া দাঁড়িয়ে আছে। জয়াকে দেখলে চয়নের একটা রিদ্স্পন্দন ড্রপ করে। আজকেও সেটা হলো। অযথা একটা বিশেষ রকম অনুভূতি যেটা চয়ন একেবারেই চায় না, আবার ভালোও লাগে।
'এই চয়ন কই যাস ? লন্ড্রি করতে নাকি ময়লা ফেলতে?"
মেয়েটা পরেও! গত সপ্তাহে ময়লা নেয়ার ভ্যানটা আসেনি , তাই চয়নকে দুই ব্যাগ ময়লা নিয়ে ফেলে আসতে হয়েছে মেন রোডের ডাস্টবিনে, জয়া সেটাও দেখেছে নিশ্চই।
"বাজারে যাই, ক্যান, কি দরকার?"
"একটা রিকশা করে দে, আধা ঘন্টা ধরে দাড়ায় আছি , কোনো রিকশা যাবে না, সব হারামজাদা "
চয়ন মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মেয়েটা এত সুন্দর কিন্তু এত নিসংকোচে গালাগালি করতে পারে!
"জয়া, আমি এখন পারব না , তাড়া আছে। "
"আরে, আমার কলেজে দেরী হচ্ছে , তুই এমন কোনো মহান কাজে যাচ্ছিসনা যে আমাকে একটা রিক্সা ঠিক করে দিতে পারবি না"
চয়ন কিছুক্ষণ রিকশা খুজলো, শুক্রবার সকাল বলে রিক্সা তেমন নেই। যে কটা আছে তার মধ্যে কেউ জয়ার কলেজের দিকে যেতে চাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে গেটের কাছে এসে দেখে জয়া একটা রিকশায় বসে আছে।
"ওঠ, এই রিকশা আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে তোকে বাজারে নিয়া যাবে। তোকে দিয়ে কোনো কাজ ঠিক মত হবে না, দেখ, আমিই রিকশা ঠিক করলাম। "
চয়ন হড়বড় করে বলে " না থাক, তুই যা, আমি আরেকটা রিকশা খুঁজে নিব। "
জয়ার কপাল কুচকে গেছে "ক্যান? আমার সাথে রিকশায় উঠলে তোর গা পচে যাবে ? আমার সাথে গেলে কি হবে? আমার গায়ে কি গন্ধ? "
চয়ন কিছু না বলে রিকশায় উঠে পড়ে , এই মেয়ে চিত্কার করতে শুরু করলে সমস্যা।
স্কুলে পড়ার সময় মাঝে মাঝে জয়ার মেজাজ ভালো থাকলে চয়নকে নিয়ে এক রিক্সায় বাসায় ফিরতো। শুধু বলতে থাকতো , "এত কঞ্জুস কেন তুই? রিক্সা ভাড়া বাচানোর জন্য আমার সাথে আসলি? কিপ্টা কোথাকার।"
জয়া এমনি, চয়নের সাথে ধমক ছাড়া কথাই বলতে পারে না মেয়েটা।
"শুক্রবার তোর কিসের ক্লাস?" চয়ন জানতে চায়।
"হরতাল অবরোধের জন্য এখন শুক্রবারেও ক্লাস হয়, জানিস না এই খবর"
আজকে অনেকদিন পর জয়ার সাথে এক রিকশায়। জয়ার গা থেকে খুব হালকা একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে। চয়ন আড় চোখে জয়াকে দেখে, সাদা পোশাকে জয়াকে সাদা পরি মনে হচ্ছে। ওর চেহারা কি নিষ্পাপ।
"চিপা দিয়ে কি দেখিস বদ? এইরকম কবে হইছিস তুই?"
"তোকে কি দেখব, তোকে দেখার কিছু আছে?"
"তুই কি দেখিস আমি জানি না মনে করছিস? ..জয়া খুব কুত্সিত একটা গালি দিয়ে রিকশা থেকে নেমে গেল। তার কলেজ এসে গিয়েছে। একবার পিছন ফিরে তাকালোও না ।
চয়ন তাকিয়ে থাকলো যতক্ষণ জয়া কলেজে না ঢুকলো ততক্ষণ। তার মাথার ভেতরতা এলোমেলো হয়ে গেছে।
না চয়ন , এসব 'ফিলিংস' তোমার পোষাবে না- নিজেকে বোঝায়। তার জীবনটা একটা ফ্লো-চার্ট , প্রেম ভালবাসা কন্ডিশন আসলে 'না' অ্যারো ফলো করতে হবে, 'হ্যা' অ্যারো তে গেলে 'ডেড এন্ড '।
চয়ন পকেট থেকে বাজারের লিস্টটা বের করে, ঘড়ি দেখে। আধঘন্টা পরের হাবিবের মাছের স্টক শেষ হয়ে যাবে। চয়নের মত অনেকেই হাবিবের মাছের খোজ জানে। চয়নকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
'ভাই, জলদি হাতিরপুল বাজারে যান তো, ফাস্ট চালান।'
চয়নকে ফাস্ট যেতে হবে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
চয়ন খালার বাসায় থাকতে আসল যখন তার বয়স বারো বছর।
তার বাবা মা একটা এক বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান। সেদিন চয়ন আর ওর ছোট ভাই অয়নেরও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অয়নের জ্বর ছিল বলে ওরা দুই ভাই বাসায় থেকে গিয়েছিল।
শোক কাটিয়ে উঠে চয়ন দেখল পারিবারিক বৈঠকে চয়ন আর অয়নের দায়িত্ব ভাগ করা হচ্ছে। তার দুই চাচা স্পষ্ট বলে দিলেন তারা কোনো দায়িত্ব নিতে পারবেন না। যে চাচাদের চয়নের বাবা মাথায় তুলে রাখতেন তারা আলগোছে মাথা থেকে বোঝা ঝেড়ে ফেললেন।
তার দুই খালার মধ্যে বড় খালা নিমরাজি হলেন চয়নকে রাখতে, কিন্তু দুই ভাইকে তিনি রাখবেন না। অন্যরা গায়ে হওয়া লাগবে আর উনি একা দুই ভাইকে ঠেলবেন কেন? তাছাড়া খালু মোটেই রাজি ছিলেন না চয়নের দায়িত্ব নিতে।
বড় খালা আর ছোট খালার মধ্যে দেন দরবার চললো , এ বলে তুমি নাও অয়নকে সে বলে তুমি নাও, যেন বল ছোড়াছুড়ি খেলা!
শেষমেষ ছোট মামা অয়নকে পেলেন, ছোট খালা রেহাই পেলেন।
অয়নের বয়স তখন পাচ। তার সেকি কান্না! "আমি ভাইয়ার কাছে থাকবো , আমি কোথাও যাব না" বলে চয়নের শার্ট ধরে ঝুলে ছিল অয়ন, ছোট মামা টানাটানি করে নিয়ে গেল অয়নকে! গাড়ির ভেতর অয়ন চিত্কার করে কাদছে , শুনতে পারছে কিছু দেখতে পারছে না চয়ন। চোখের পানি সব ঢেকে দিচ্ছে।
খালার বাসায় চয়নকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো। বাসার টুকটাক কাজও করত, খালার এটা সেটা এগিয়ে দেয়া, কেউ আসলে দরজা খুলে দেয়া- এইসব। খালা লুকিয়ে লুকিয়ে দশ বিশ টাকার নোট গুজে দিতেন টিফিন খাওয়ার জন্য। টাকাটা জমিয়ে রাখত দুঃসময়ের জন্য।
স্কুলেই প্রথম জয়ার সাথে দেখা।
'এই ছেলে তুমি আমাদের বাড়িওয়ালার বাসায় থাক না?"
চয়ন মাথা নাড়ে।
"আমি তোমাকে দেখছি, তুমি কি এখন থেকে এই ক্লাসে পড়বা ?"
চয়নের উত্তরের অপেক্ষা না করেই জয়া বলতে থাকে "ভালো হইছে, তুমি সব নোট লিখবা ক্লাসে, পরে আমি তোমার থেকে দেখে নিব, ক্লাসে নোট লিখতে আমার ভাল্লাগেনা। তোমার সমস্যা নাই তো?"
দুই তিন দিন পর জয়া বাসায় কাজের ছেলেকে দিয়ে একটা চিরকুট পাঠালো "অঙ্ক স্যারের নোট গুলা লাগবে ।"
পরদিন ক্লাসে জয়াকে জিজ্ঞেস করেছিল, নোট লিখে পাঠানোর কি আছে, কাজের ছেলেটা মুখে বললেই তো পারে। জয়া রাগী রাগী ভাবে বলেছিল, "নোট লিখলে কি হয়? কাজের ছেলে ঠিক মত বলতে পারবে না তাই নোট লিখে দিছি, কি হইছে তাতে?"
চয়ন কথা বাড়ায়নি, খালি চিরকুটটা যত্ন করে রেখে দিয়েছে ।
ওদের বন্ধুত্বটা অদ্ভুত ছিল। এমন না যে জয়া বসে বসে ওর সাথে গল্প করতো কিংবা হাহা হিহি করতো , তবু কেমন যেন অদ্ভুত একটা টান ছিলো চয়নের। হয়ত বাসা থেকে টিফিন আনেনি, খালার দেয়া দশ টাকা জমানোর জন্য টিফিন কিনেও খাবে না, জয়া হটাত ঝুপ করে এসে বলতো " এই আজকে টিফিন আনছিস ?"
"নাহ, খিদা নাই। "
"আম্মা টিফিনে খিচুড়ি দিছে, খাইতে ইচ্ছা করতেছে না, তুই খেয়ে ফেল। "
"তুই খাবি না ক্যান?"
"খিচুড়ি খাইলে মানুষ মোটা হয়, আমি মুটকি হতে চাই না , তুই খা , তোর কঙ্কাল শরীরে কিছু হবে না ।"
"না খাইলে ফলে দে, আমাকে দিচ্ছিস ক্যান?"
"ঢং করবি না, একেকটা ভাতে সত্তুর নেকী , ভাত ফেলা গুনাহ , তুই এক্ষণ খাবি। "
ঠান্ডা খিচুড়ি চয়নের অমৃতের মত লাগতো।
ক্লাস টেনএ ক্লাসের সবাই যখন পিকনিকে যাবে চয়ন চাদা দিতে পারবে না বলে যাবে না ঠিক করলো। মন খুব খারাপ, সবার কত প্ল্যান করছে পিকনিক নিয়ে, আর চয়ন যেতে পারছে না। পরদিন ক্লাসে যাওয়ার পর স্যার বললেন চয়নের চাদার ব্যবস্থা করা হয়েছে, চয়ন যেতে পারবে। সেদিন মনে হচ্ছিল জীবনে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হবে।
পিকনিকে সবাই এসেছিল, খালি জয়া আসেনি। চয়নের মনে ক্ষীন ধারণা জয়া নিজের টাকা চয়নের জন্য দিয়েছে। ধারণা প্রমানিত করতে জয়াকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল। জয়া বরাবরের মত ধমকে বলেছিল "তোর জন্য আমার এত আল্লাদ করার দরকার কি? তোর সাথে কি আমার প্রেম? " চয়ন আর জানতে চায়নি। বলতে গিয়েও বলেনি পিকনিকে প্রতি মুহুর্তে জয়াকে ভিশন ভাবে মিস করেছে।


চয়ন যখন বয়েস কলেজে ভর্তি হলো, জয়া তখন মেট্রিকে প্রচন্ড খারাপ রেসাল্ট করে একটা কলেজে কোনো রকমে ভর্তি হলো। পড়ায় কোনো মনোযোগ কোনো কালে জয়ার ছিল না। অনেক ছেলে জয়ার জন্য পাগল হলেও কিভাবে যেন পাতি গুন্ডা সাইফের সাথে ওর প্রেম হয়ে গেল। জয়াকে প্রায়ই সাইফের সাথে এদিক সেদিক দেখা যায়।
জয়ার সাথে আসতে আসতে দুরত্ব বাড়তে থাকে। চয়ন কলেজ নিয়ে আর জয়া তখন প্রেম নিয়ে ব্যস্ত। খালি মাঝে মাঝে চিরকুট আসে " কলে পানি নাই, মোটর ছেড়ে দে", "দশ টাকার ভাংতি লাগবে" । চিরকুটের সংগ্রহ বেশ ভালো । মাঝে মাঝে খুলে দেখতে ভালো লাগে চয়নের।


চয়নের একটাই লক্ষ্য , পড়া শেষে একটা ভালো চাকরি করতে হবে। তাহলে ঢাকায় একটা বাড়ি ভাড়া নেবে, অয়নকে ঢাকায় নিজের কাছে রাখবে। ভাইটাকে কতদিন পর পর দেখে চয়ন!
একটা লক্ষী মেয়েকে বিয়ে করবে। বউ হিসাবে জয়াকে ভাবতে ভালো লাগে চয়নের। কল্পনায় জয়াকে নিয়ে হাত ধরে রিকশায় চড়া যায়, সুইজেরল্যান্ড ঘুরে আশা যায়, জয়ার হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়া যায়।
কিন্তু বাস্তবতার মই বেয়ে উপরে উঠতে গেলে অনেক কল্পনার বোঝা মাথা থেকে ফেলে দিতে হয় -এটা চয়ন খুব ভালো বোঝে।
------------------------------------------------------------------
খুব অল্প কিছু বিকালে চয়ন ছাদে উঠতে পারে। আজকে ওর মন বিশেষ রকম খারাপ। অয়ন পরীক্ষায় খারাপ করেছে। ছেলেটা এত বোকা,ফোনে শুধু কেদেই যাচ্ছে। খালি বলছে ভাইয়া তুমি আসো। কিভাবে বোঝাবে এখনি আসা সম্ভব না।
সিড়িঘরের পিছনে কে যেন কাদছে, কান্নার শব্দ আসছে থেমে থেমে।
চয়ন এগিয়ে গিয়ে দেখে জয়া কাদছে।
“এই কি হইছে, কাদিস কেন?"
"তোর কি দরকার?" ঝাজিয়ে ওঠে জয়া " মানুষের সব বিষয়ে তোর নাক গলাতে হবে ক্যান? যা আমার সামনে থেকে।"
চয়নের হটাত কেমন জেদ চেপে যায় "না, আমি যাব না, বল কি হইছে? তোকে কানতে দেখলে আমার ভাল্লাগেনা, কান্না থামা এক্ষণ।"
জয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, চয়ন এভাবে কখনো কথা বলে না, সবাই চয়নকে যত খুশি কথা শোনায় , এমনকি জয়াও। চয়ন চুপ চাপ শোনে।
জয়া উঠে দাড়ায় , কিছু না বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। পেছন থেকে চয়ন বলতে থাকে , "কি হইছে জয়া, বলে যা" জয়া জবাব দেয় না।
পরদিন একটা চিরকুট আসে "আগামীকাল পহেলা ফাল্গুন, আমার সাথে দেখা করতে আসবি " নিচে একটা পার্কের ঠিকানা আর সময় লেখা।
-------------------------------------------------------------------
সকাল থেকেই চয়নের ভিশন টেনশন হচ্ছে, কেন দেখা করতে চায় জয়া? কি বলবে? মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, কোনো রকম ইমোশনকে পাত্তা দিলে হবে না। কিন্তু মনটা কিছুতেই কথা শুনছে না, হোক আজকে যা খুশি।হয়ত এমনিতেই ডেকেছে জয়া। কিন্তু চয়নের মনে হচ্ছে আজকে বিশেষ কিছু ঘটবে।
সময় মত পার্কে গিয়ে দেখে চারপাশ আলো করে জয়া বসে আছে। চয়নের স্বপ্নের জয়া।
জয়া হলুদ শাড়ি পরেছে, মাথায় লাল ফুল। এত সুন্দর কেন হয় একটা মানুষ? বুকের ভেতর ব্যথার মত লাগে।
"কিরে, তুই কি জেল খানা থেকে আসলি? এই সাদা কালো কয়েদিদের মত কাপড় কেন পরেছিস ?"
"আজকে পহেলা ফাল্গুন, সবাই পাঞ্জাবি পড়তেছে"
"আজকে পহেলা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারী নারে গাধা ।" জয়া ঠোট চেপে হাসতে থাকে।
"আমি বাঘ ও না, সিংহ ও না, তাহলে আমার পাশে বসতে তোর এত সমস্যা ক্যান?"
চয়ন জয়ার পাশে এসে বসলো, জয়ার হাত ভর্তি চুড়ি , হাতটা ধরতে খুব ইচ্ছা করছে চয়নের।
জয় কেমন চুপচাপ। এক ঠায় সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। এত চুপচাপ মানায় না ওকে, তারচেয়ে বরং একটু ধমকে দিক চয়নকে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় এভাবেই কেটে যায়, চাপা একটা নিস্তব্দতা কেমন যেন অস্বাভাবিক।
"তুই সেদিন বললিনা , আমার কান্না দেখলে তোর ভালো লাগে না, জানিস, এভাবে আমাকে কেউ কখনো বলেনি।"
আবার অনেকক্ষণ চুপ জয়া। কি একটা দ্বিধা হয়ত ওর মধ্যে কাজ করছে।
"আমার অনেক কষ্টরে চয়ন। আমার কিছুই ভালো লাগে না।" কেমন অসহায় ভাবে বলে জয়া।
চয়নের মনে কোনো দ্বিধা নেই, ও হাত বাড়িয়ে জয়ার হাত ধরে "আমাকে বল, দেখবি আমি সব ঠিক করে দেব।"
জয়া এবার তাকায় চয়নের দিকে।
"আমার মায়ের দুসম্পর্কের ভাই, আবিদ মামা, প্রায়ই আমাদের বাসায় আসে, তুই হয়ত দেখেছিসও। ওনার সাথে বাবার ব্যবসা। বাবাকে ব্যবসা করতে অনেক টাকা ধার দিয়েছেন উনি। মা বাবা ওনাকে পারলে মাথায় নিয়ে নাচে। সেই জন্য সব সময় আমাদের বাসায় যাতয়াত।আর উনি কি করতো জানিস? আমাকে কোলে নিয়ে আদর করতো, আমার সারা গায়ে হাত দিতো। আর...." "
হু হু করে কেদে ফেলে জয়া " আমার বয়স তখন সাত, আমি বুঝতে পারি , কিছু একটা ভুল হচ্ছে, কিন্তু কাউকে বলতে পারিনি। যখন বলতে পারার মত বয়স হলো, মাকে বললাম, মা আমাকে বললেন আমার নাকি মনের ভুল, আবিদ মামা আমাকে মেয়ের মত আদর করে। আমার চিত্কার করে বলতে ইচ্ছা করে , মা, তুমি ভুল ভাবতেছ, আমাকে বাচাও। আমি বলতে পারি না। উনি আসলে আমি দরজা বন্ধ করে রাখি, ভয়ে আমার খিচুনি উঠে যায়, চোখ উল্টে যায়। অথচ কেউ বোঝে না আমি কেন এমন করছি। "
"সব সময় মনে হয় রূপকথার গল্পের মত রাজকুমার এসে বন্দিনী রাজকন্যাকে নিয়ে যাবে, কিন্তু এসব তো শুধু গল্পেই হয়, ঠিক না? জানিস আমি সাইফের সাথে পালায় যেতে চাইছিলাম। সাইফের সেই সাহস
ছিল না।"
কান্নায় কথা আটকে যায় জয়ার।
"আমার গা ঘিন ঘিন করে , নিজেকে নষ্ট মনে হয়। এভাবে আমি আর থাকতে পারবনা, আমি মনে হয় মরেই যাব।"
ফাল্গুলের সতেজ বিকাল কেমন কালো ছায়ায় ঢেকে যায়।
"চয়ন, তোকে কেন এসব বললাম জানি নারে। কাউকে বলতে চাইছিলাম, আমার ভিতরের সব ময়লা গুলা বের করতে চাইছিলাম ।"
জয়ার চোখে পানি, চয়নের চোখে আগুন।
-------------------------------------------------------------------
সংবাদ শিরোনাম

গুলশানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবিদ খান গতকাল সন্ধায় অজ্ঞাতনামা আততায়ীর হাতে খুন হয়েছেন। সূত্র জানায় , আবিদ খান প্রতিদিনের মত পার্কে বৈকালিক ভ্রমন শেষে হেটে বাড়ি ফেরার পথে হত্যাকারী উপূর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আবিদ খানের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে ব্যবসায়িক শত্রুতা থেকে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে। গুলশান থানায় এই হত্যা কান্ডের জন্য একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে । পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া এখানে এতো সুন্দর সুন্দর গল্প। যতই পড়ছি ততই ভালো লাগছে। অভিনন্দন প্রিয় লেখিকা।
মনজুরুল ইসলাম অিভনন্দন এবং নববেষর্র শুেভচ্ছা।
শামীম খান অভিনন্দন ।
আন্তরিক ধন্যবাদ
এফ, আই , জুয়েল # সুন্দর । পানি আর আগুন -----অনেক ভালো লাগলো ।।
আন্তরিক ধন্যবাদ
রাজু অভিনন্দন আপু ।
আন্তরিক ধন্যবাদ
সৃজন শারফিনুল অভিনন্দন এবং অনেক শুভ কামনা, প্রিয় সালমা আপু..
আন্তরিক ধন্যবাদ
আখতারুজ্জামান সোহাগ অভিনন্দন।
আন্তরিক ধন্যবাদ
মুন্না বড়ুয়া অসাধারণ লিখেছেন। ভাল লাগল পড়ে। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
আন্তরিক ধন্যবাদ
দীপঙ্কর বেরা সুন্দর ছবি এঁকেছেন । ভাল লাগল । আপনার মূল্যবান মত ও ভোটে আমরাও বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি । ভাল থাকবেন ।
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ, আপনার লেখা গোপলার গল্প গুলো কিন্তু আমার ভালো লাগে।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মনোয়ার মোকাররম সুন্দর গল্প .....
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

২২ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৯৬

বিচারক স্কোরঃ ২.৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.১৬ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪